ফরিদপুরের খেজুরের গুড় যাচ্ছে বিদেশে

ফরিদপুরের খেজুরের গুড় জন্য বিখ্যাত জেলা। একসময় এ জেলার ঐতিহ্য ছিল খেজুরের গুড়। এখনো কিছু এলাকায় তৈরি হচ্ছে আসল খেজুরের গুড়।

 

ফরিদপুরের খেজুরের গুড় যাচ্ছে বিদেশে

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাচ্ছে এ গুড়। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদামতো গুড় দিতে পারছেন না গাছিরা। কৃষি অফিসের সূত্র মতে, জেলার ৯টি উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখের মতো খেজুর গাছ রয়েছে। সরেজমিন ফরিদপুর সদরের গঙ্গাবর্দী এলাকার কৃষি ইনস্টিটিউট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। রস চুলায় জ্বাল দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে গুড় তৈরি হতে। রস জ্বালিয়ে তৈরি করা গুড়ের চাহিদাও অনেক।

গুড় তৈরির সময়ই ক্রেতারা দাঁড়িয়ে থাকেন গুড় নেওয়ার জন্য। ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড় তৈরিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন কৃষি কলেজ এলাকার বাসিন্দা এনামুল হাসান গিয়াস। তিনি বলেন, আগের চেয়ে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে গেছে। তা ছাড়া গাছ কেটে রস বের করার জন্য গাছিও পাওয়া যায় না। রাজশাহী, যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গাছিদের আনতে হয়। তিনি জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানের প্রায় দেড় হাজার গাছ দেখভাল করেন তিনি। নিপা ভাইরাস রোধে প্রতিটি গাছে রস সংগ্রহের সময় হাঁড়ির মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।

এই গাছগুলো থেকে রস বের করার জন্য তিনি রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গাছিদের নিয়ে আসেন। কোনো লাভের জন্য নয়, তিনি এ জেলার বিখ্যাত গুড় মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতেই এ কাজটি করেন। সারা দেশেই এই গুড়ের চাহিদা রয়েছে। দেশের বাইরেও গুড় পাঠানো হয়। তবে রসের জোগান না থাকায় গুড় দিতে হিমশিম খেতে হয়। বর্তমানে শীত কম থাকায় রসের উৎপাদন একেবারেই কমে গেছে। রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামের বাসিন্দা লালন আলী। তিনি রাজশাহী থেকে নভেম্বর মাসের শুরুতে এসেছেন ফরিদপুরে।

সঙ্গে নিয়ে এসেছেন আরও তিনজন সহযোগীকে। লালন বলেন, কৃষি কলেজ ও আশপাশের ১৫০টি খেজুর গাছ আমরা তিনজন দেখভাল করছি। নভেম্বর মাসের শুরুতে এসেছি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বাড়িতে যাব। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি গাছ আমরা ৩০০ টাকা করে এ বছরের জন্য লিজ নিয়েছি। গাছ কাটার প্রথম এক মাস রস বের হয় না। পরের দুই মাস রস পাওয়া যায়।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

এখন মোটামুটি রস পাচ্ছি আমরা। রস বিক্রি করছি ৫০ টাকা লিটার, এ ছাড়া এক হাঁড়ি (৮ লিটার) নিচ্ছি ৪০০ টাকা। আর ঝোলা গুড় বিক্রি করছি ৩০০ টাকা, শক্ত পাটালি বিক্রি করছি ৫০০-৬০০ টাকা কেজি।

রাজশাহী থেকে আসা গাছি সেলিম মণ্ডল বলেন, বাদুড় যাতে রসের হাঁড়ির ওপর বসতে বা মুখ দিতে না পারে সে জন্য নীল, লাল কাপড় দিয়ে হাঁড়ির মুখ বেঁধে দেওয়া হয়। নিপা ভাইরাস প্রতিরোধে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন ১৫০টি গাছের মধ্যে ৮০টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। তাতে প্রতিদিন ২৫০ লিটার রস সংগ্রহ করতে পারি। এই রসে প্রতিদিন ১৫ কেজি গুড় তৈরি হয়। তিনি বলেন, সরাসরি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রণ ছাড়াই এই গুড় তৈরি করা হয়। অনেকেই সামনে দাঁড়িয়ে থেকে গুড় তৈরি করে নিয়ে যান।

যে পরিমাণ রস সংগ্রহ হয় তাতে চাহিদা পূরণ হয় না। অনেককেই আমরা গুড় দিতে পারি না। কৃষি কলেজ এলাকায় যেখানে গুড় তৈরি করা হয় সেখানে গুড় কিনতে আসা শহরের আলিপুর এলাকার আসাদুল হক বলেন, এখানে ভেজালমুক্ত গুড় পাওয়া যায় তাই কিনতে এসেছি। দাঁড়িয়ে থেকে গুড় বানানো দেখে গুড় নিয়ে বাড়ি যাব। গুহ লক্ষ্মীপুর এলাকার সমশের আলী জানান, তার ছেলে বিদেশে থাকে তার জন্য পাঠাব, এ জন্য গুড় নিতে এসেছি।

কিন্তু ওরা দিতে পারল না। বলল কয়েক দিন দেরি হবে। ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ফরিদপুরের খেজুর গুড়ের সুনাম রয়েছে সারা দেশে। তবে দিনদিন খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গুড় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। সম্প্রতি কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে গাছ লাগানো হচ্ছে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment